বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ

Monday, October 17, 2011

মোজাহেদুল ইসলাম 

Details

আইটি ইন্ডাস্ট্রির কম্পেটিটিভনেস ইনডেস্ক ২০১১ জরিপে

গত কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে এর মাঝেও সংশ্লিষ্ট বেশকিছু খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। যার ফলে সম্প্রতি বিএসএ এবং ইআইইউ এর এক র্যাংকিং এ আগেরবারের তুলনায় একধাপ পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে আজকের প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোজাহেদুল ইসলাম

তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বিজনেস সফটওয়্যার এলায়েন্স (বিএসএ) সম্প্রতি ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ই আই ইউ) এর আইটি ইন্ডাস্ট্রি কমপিটেটিভনেস ইনডেক্স-২০১১ সংকলনে এই তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
এবারসহ ২০০৭ এর পর চতুর্থবারের মতো ইনডেক্সটি হালনাগাদ করা হলো। এই ইনডেক্সটি ৬৬টি দেশকে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের বিভিন্ন মানদন্ডে বিচার করে যেমন: সর্বোপরি ব্যবসার পরিবেশ, তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো, মানবসম্পদ, গবেষণা ও উন্নয়ন, আইন সংক্রান্ত পরিবেশ এবং জনসমর্থন।
আইটি ইন্ডাস্ট্রি কমপেটিটিভনেস ইন্ডেক্স এর ২০১১ সালের সংকলনটি বিএসএর ওয়েবসাইট (www.bsa.org/globalindex) থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এছাড়াও ওয়েবসাইটটিতে র্যাংকিং টেবিল, সদস্যদেশগুলোর ওপর বিস্তারিত তথ্য, ইন্ডাস্ট্রি কেস স্টাডি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ভিডিও ইন্টারভিউ পাওয়া যাবে।
২০১১ এর র্যাংকিং এ সবচেয়ে উপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশ র্যাংকিং এ এক ধাপ নেমে এখন বিশ্বে ৬৩তম। বিএসএর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিনিয়র পলিসি ডিরেক্টর রজার সমারভিলের মতে, ‘সর্বোপরি ব্যবসার পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের এই অবনমনের মূল কারণ। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সঠিক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
এ বছরের ইন্ডেক্স র্যাংকিং থেকে বোঝা যায়, যে সব দেশগুলো বছরের পর বছর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করেছে মূলত তারাই এখন বিনিয়োগ এর সুফল পাচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো এগিয়ে আসার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে আর উন্নত দেশগুলোকে তাদের স্থান ধরে রাখার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
বিএসএ প্রেসিডেন্ট ও সিইও রবার্ট হলিম্যান এর ভাষ্যমতে, ‘এ বছরের আইটি ইন্ডাস্ট্রি কমপিটেটিভনেস ইনডেক্স থেকে বোঝা যায় যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য আনে। সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সামনে সুযোগ আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার। এ বিনিয়োগ যে বৃথা হবে না তা বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।’
ইনডেক্স এর তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে সবচেয়ে বেশী এগিয়েছে মালয়েশিয়া। গবেষণা ও উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগের সুবাদে ২০০৯ এর র্যাংকিং থেকে ১১ ধাপ এগিয়েছে দেশটি। ১০ ধাপ এগিয়ে ভারতও খুব পিছিয়ে নেই। এছাড়াও শক্ত অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর, মেক্সিকো, অস্ট্রিয়া, জার্মানি এবং পোল্যান্ড।
রবার্ট হলিম্যান এর মতে, ‘যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতি মন্দাভাব কাটিয়ে উঠেছে, তাই সরকারগুলোর বোঝা উচিত যে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার এটাই সবচেয়ে মোক্ষম সময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নীতিনির্ধারকেরা যদি এক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোন তাহলে পিছিয়ে পড়বেন। পরিকল্পনা হতে হবে ৭ থেকে ৯ বছরের এবং বিনিয়োগ হতে হবে পর্যাপ্ত।’
র্যাকিংয়ের নিয়ামক সমূহ
বিএসএ’র এই বেঞ্চ মার্ক তৈরিতে যে সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোকে ছয়টি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এই ছয়টি শ্রেণী হচ্ছে—
১. সার্বিক ব্যবসার পরিবেশ
২. আইটি অবকাঠামো
৩. মানব সম্পদ
৪. গবেষণা ও উন্নয়ন
৫. আইনি পরিবেশ
৬. আইটি শিল্প উন্নয়নে সমর্থন
সার্বিকভাবে র্যাংকিং করার জন্য সঠিক ব্যবসা পরিবেশর এর ১০% আইটি অবকাঠামোর ২০%, মানব সম্পদের ২০%, গবেষণা ও উন্নয়নে ২৫%, আইনি পরিবেশে ১০% এবং আইটি শিল্প উন্নয়নে সমর্থনে ১৫% মান ধারা হয়েছে।
এই শ্রেণীগুলোর মধ্যে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে, সেগুলো হলো- বিদেশি বিনিয়োগের সরকারি নীতিমালা, প্রাইভেট সেক্টরে সম্পত্তি সংরক্ষণ, নতুন ব্যবসা শুরুতে সরকারি নীতিমালা, আইটি খাতে বিনিয়োগ, কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা, ইন্টারনেট সুরক্ষা, মোবাইল ব্যবহারের প্রসার, উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার, প্রযুক্তি দক্ষতা, সরকারি গবেষণা, রয়্যালটি, মেধাস্বতত্ব সংরক্ষণ আইন, মেধাস্বত্ত্ব আইনের প্রয়োগ, ইলেকট্রিক স্বাক্ষর, ই-গর্ভর্নমেন্ট কৌশল, সরকারি কাজকর্মে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতি। এসকল বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ মোট পয়েন্টের ভিত্তিতে এই র্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে।
র্যাংকিং এর উল্লেখযোগ্য দিক
এবারের র্যাংকিং-এ গতবারের মতোই শীর্ষস্থানে রয়েছে যুুক্তরাষ্ট্র এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। তবে ৬ ধাপ এগিয়ে সিঙ্গাপুরের অবস্থান এখন তৃতীয়। সার্বিক ব্যবসার পরিবেশ, আইন পরিবেশ এবং আইটি শিল্প উন্নয়নে সমর্থনের জায়গাগুলোতে অনেকখানি এগিয়েছে এই দেশটি। এই তালিকায় আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় মালয়েশিয়া এবং ভারতের উত্তরণ। তালিকায় ১১ ধাপ এগিয়ে মালয়েশিয়ার অবস্থান এখন ৩১ এ। আর ১০ ধাপ এগিয়ে ভারতের অবস্থান ৩৪ এ। সবচেয়ে বড় অবমনটি লিথুনিয়ার। ১০ ধাপ পিছিয়ে তারা এখন ৪১তম স্থানে যৌথভাবে অবস্থান করছে তুরস্কের সাথে যারা ৫ ধাপ এগিয়েছে। অন্যদিকে ৮ ধাপ পিছিয়ে রাশিয়া ৪৬তম স্থানে অবস্থান করছে।
র্যাংকিং-এ অবনমন বাংলাদেশের
গত বছরের র্যাংকিং-এ ৬২তম স্থানে থাকলেও এবার একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ৬৩তে। সার্বিক র্যাংকিং পয়েন্টে বাংলাদেশের আজ সর্বমোট ২০.৬ পয়েন্ট। গতবারের র্যাংকিং এ বংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ছিল ২১.১। এবারে ব্যবসায় পরিবেশে বাংলাদেশের অর্জন ৪৭.১ পয়েন্ট, আইটি শিল্প বিকাশে সমর্থনে ৫১ পয়েন্ট, আইনি পরিবেশে ৪০ পয়েন্ট এবং মানব সম্পদে ২০.১ পয়েন্ট। সার্বিক ব্যবসার পরিবেশে, আইটি শিল্প বিকাশ সমর্থ এবং আইনি পরিবেশে বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মোটামুটি সন্তোষজনক পয়েন্ট লাভ করলেও আইটি অবকাঠামোতে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ০.৯ পয়েন্ট। আর গবেষণা ও উন্নয়নে কোনো পয়েন্ট পেতে ব্যর্থ হয়ে এই দেশ। মূলতঃ এই দুটি খাতেই বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পিছিয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে তথ্য প্রযুুক্তি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে আসার জন্য আসলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আর তার জন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি উদ্যোগকে উত্সাহিত করা। তা না হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে আসা যাবে না।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.bsa.org/globalindex

0 comments:

Post a Comment

 

Admin

My Photo
Shah Alam Badsha
View my complete profile

About This Blog

Poll

Powered By Blogger
Powered by Blogger.

Counter

 

© 2010 Excellent Bangladesh